চলতি বছরের ৩ জুলাই ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম দিন পার করে বিশ্ব। সেদিন বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৭.০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ২০১৬ সালের অগাস্টের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রাকে (১৬.৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ছাড়িয়ে যায়। বস্তুত, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, জুন ছিল বিশ্বের তাপমাত্রার ইতিহাসে সবচেয়ে উত্তপ্ত মাস।
৩ জুলাই বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তবে বাংলাদেশে এ বছর সবচেয়ে উষ্ণতম দিন ছিল এপ্রিল মাসে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাতে গণমাধ্যম জানায়, এ বছরের ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। সেদিন ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের গত ৩৬ বছরের (১৯৮৬-২০২১) গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ডেটা বিশেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৯ সালের পর ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল ঊর্ধ্বমুখী।
ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা
২০১১ সালে ঈশ্বরদীর গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরের দুই বছর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ে। ২০১৫ সালে তা নেমে আসে ৩৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
২০১৬ সালে ঈশ্বরদীর গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আবারো বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পরের দুই বছর তা কিছুটা কমে আসে।
সবশেষ ২০১৯ সাল থেকে ঈশ্বরদীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় গড় আবারো বাড়তে শুরু করে। ২০২১ সালে এসে তা দাঁড়ায় ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
ঈশ্বরদীর আগে এ বছরের ১৬ এপ্রিল যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গার গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার বছরভিত্তিক ডেটা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ জেলার গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা ঈশ্বরদীর সাথে প্রায় সাদৃশ্য। ২০১৯ সালের পর চুয়াডাঙ্গাতেও বাড়ছে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
তবে যশোরের ক্ষেত্রে চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন। ১৯৯৭ সালে যশোরের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরের বছর কিছুটা কমে গিয়ে আবারো বাড়ে যশোরের তাপমাত্রা। ১৯৯৯ সালে যশোরের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়ে যায়।
এরপর তাপমাত্রা খানিকটা কমে গিয়ে ওঠানামার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো এ জেলার তাপমাত্রা। ২০১০ সালে এসে তা আবারো ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে। সেবছর যশোরের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ জেলায় তাপমাত্রা আরেক দফা বৃদ্ধি পায় ২০১৬ সালে। ২০১৬ সালের পর যশোরের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আবারো কমতে শুরু করে। ২০২১ সালে তা কিছুটা বাড়লেও ৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেনি।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তাপমাত্রা বিষয়ক উম্মুক্ত ডেটা বলছে, ১৯৮৯ সালে সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত ছিল যশোর। সেবার এপ্রিল মাসে যশোরের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে রাজধানী ঢাকায়ও ছুঁয়ে গেছে এই তাপপ্রবাহ। এবছর ১৬ এপ্রিল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে ৪১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ঢাকায় ৫৮ বছরের মধ্যে দৈনিকের হিসাবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
তবে ঢাকার এপ্রিল মাসের তাপমাত্রার বৃদ্ধির প্রবণতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০০০ সালের পর থেকে ঢাকার গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেশিরভাগ বছরগুলোতেই ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার কম ছিল।
২০০৯ সালে এসে ঢাকার গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে। যদিও ২০১১ সালেই তা আবার কমতে শুরু করে। এরপর ২০১৬ সালে তা আবারো খানিকটা বেড়ে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আসে।
২০১৭ সাল থেকে ঢাকায় এপ্রিল মাসের তাপমাত্রা আবারো ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে। তবে, ২০২১ সালে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পুনরায় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
এপ্রিল মাসে ঢাকা সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত ছিল ১৯৯২ সালে। সে বছর এপ্রিল মাসের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উল্লেখ্য, এই ৩৬ বছরের মধ্যে ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৩, ১৯৯৬, ২০০৬, ২০১৪, ২০২০ সালের ডেটা পাওয়া যায়নি।