বাংলাদেশে সুস্থ হয়ে ওঠা কোভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তির সংখ্যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
৩ মে (রবিবার) স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলা হয়, দেশে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যা ১,০৬৩। এতেই আলোচনার সূত্রপাত সোশ্যাল মিডিয়ায়।
রবিবারের আগ পর্যন্ত দেশে সুস্থ হয়ে ওঠা মোট কোভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১৭৪। ব্রিফিংয়ে আগের ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা জানানো হতো যা সাধারণত দুই অঙ্কের ঘরে সীমিত থাকত।
অধিদফতরের দৈনিক ব্রিফিংয়ে গত কয়েকদিন ধরে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানা মুখপাত্র হিসেবে ব্রিফ করে আসছেন। সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষিত হিসেবে তিনি জানান, সুস্থতার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে অধিদফতর। ফলে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,০৬৩।
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তির সুস্থতার শ্লথ গতি ইতিমধ্যে অনেকেই লক্ষ্য করেছেন। ১ মে পর্যন্ত মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা জানানো হয়েছিল ১৭৪ জন।
এর পাশাপাশি ডা. নাসিমা ১ মে-ই জানান, ঘোষিত সুস্থ ব্যক্তির বাইরে প্রায় ৮০০ কোভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তি বাসায় ও হাসপাতালে রয়েছেন যাদের মধ্যে বর্তমানে কোভিড-১৯ এর লক্ষণ বা উপসর্গ নেই।
কোভিড-১৯ এর লক্ষণমুক্ত ব্যক্তিদের সাধারণত আরো দুদফায় পরীক্ষা করা হয়। ওই ৮০০ জনের কারো একটি, কারো দুটি আবার কারো একটিও পরীক্ষা তখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। এর একদিন পর (৩ মে) সুস্থতার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ ও সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির তথ্য আসে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছ থেকে।
১ মে ডা. নাসিমার ওই ৮০০ লক্ষণবিহীন ব্যক্তির তথ্য জানার পর থেকেই প্রশ্ন জাগছিল যে ওই ব্যক্তিদের কি আমরা সুস্থ বিবেচনা করব? এখানে মনে রাখা দরকার যে, এরা সবাই এক দফা কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়ে চিকিৎসা পর্ব পার করেছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ আরো দুটি পরীক্ষায় কোভিড-১৯ পজিটিভ হতে পারেন, নাও হতে পারেন। বাংলাদেশের ওই ৮০০ জনের কতজনের সেরে ওঠার পর কতদিন পার হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রকাশ করেনি।
কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়ে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ ও যথাযথ সময় আইসোলেশনে পার করা ব্যক্তিদের সুস্থ বিবেচনা করাই শ্রেয়। যদিও তাদের সবারই আরো দু’বার করে পরীক্ষা হবে। সেই পরীক্ষায় আবারও কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে বিশ্বজুড়ে একবার সুস্থ হওয়া ব্যক্তি দ্বিতীয় দফায় পজিটিভ হচ্ছেন এমন সংখ্যা আশঙ্কাজনকরকম বেশি দেখা যায়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসজনিত মৃদু অসুস্থতা প্রায় দু’সপ্তাহে সেরে যায়। মারাত্মক অসুস্থতার ক্ষেত্রে সেরে উঠতে সময় লাগে তিন থেকে ছয় সপ্তাহ।
অভূতপূর্ব কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে আক্রান্ত, সুস্থ, মৃত্যু ইত্যাদি ক্ষেত্রে সংজ্ঞা নির্ধারণে বিভিন্ন দেশে সময়ে সময়ে পরিবর্তন দেখা গেছে। চীনে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত-মৃত্যুর সংজ্ঞা পাল্টেছে। মৃত্যুর হিসেবের ক্ষেত্রে দুই পদ্ধতি অনুসরণ করেছে যুক্তরাজ্য। দেশটি শুরু থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শুধু হাসপাতালে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের কোভিড-১৯ মৃত্যুর তালিকায় রাখছিল। যদিও দেশটিতে বিভিন্ন প্রবীণ সেবাকেন্দ্রে করোনাভাইরাসে অনেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছিল। কদিন আগে সেসব মৃত্যুকেও কোভিড-১৯ জনিত মৃত্যুর হিসেবে নেয়ার কথা জানায় যুক্তরাজ্য সরকার।
প্রবীণ সেবাকেন্দ্রে মৃতের সংখ্যা হিসেবে নেয়ার পর (২৯ এপ্রিল) যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬,০০০। এই মৃত্যুর মাত্র ৩০ শতাংশ ঘটেছে হাসপাতালে (বিস্তারিত বিবিসির এই ইংরেজি প্রতিবেদনে)।
ঢাকায় আপনার এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা জানতে ক্লিক করুন